নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমান গণির অনিয়ম ও দূর্নীতি ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ তুলে ৬১ মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষরে অভিযোগ দিয়েছেন। সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহফুজের কাছে এ অভিযোগ দেন। অভিযোগের অনুলিপি সোনারগাঁ থানার ওসিকেও দেওয়া হয়েছে। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ৮টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরা হয়। এঘটনায় তদন্ত শেষে দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে অব্যাহতি দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। গত সোমবার বিকেলে সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চলমান কার্যক্রম পরিচালার জন্য মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ও আলতাফ হোসেনকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও অভিযোগের তদন্ত করতে সোনারগাঁ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্ত মো. ইকবাল হোসেন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রশাসনিক কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলামকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি, সোনারগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে ওসমাণ গণি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দায়িত্ব পালনকালে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ২৯৪জন থেকে ৫ শতাধিকে উন্নিত করে ভূয়াদের ভাতা আত্মসাৎ করেন। বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বই এবং ব্যাংকের চেক বই তার-নিজের নিকট রেখে তার নিজের লোকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে অর্ধেক টাকা আত্মসাত করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দুটি টেলিভিশন ও একটি এসি নিজের বাড়িতে নিয়ে ব্যবহার করেন। ২০২২ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ থেকে পাওয়া বিশটি কম্পিউটার এবং চারটি এসি সোনাগাঁ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই কম্পিউটার ও চারটি এসি কোথায় ব্যবহার করছেন তার হদিস নেই। আদমপুর বাজারে পৌর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বরাদ্ধকৃত দোকান পাটের ভাড়ার টাকা আত্মসাৎ করেন। মুক্তিযোদ্ধা কমপেক্স ভবনে স্কুল থেকে প্রাপ্য আয় ও রুমের ভাড়া টাকাও আত্মসাত করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্ধকৃত গৃহহীন মুক্তিযোদ্ধাদের ‘বীর নিবাস’ প্রকল্পের টাকার বিনিময়ে স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়েছেন। অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা বঞ্চিত হয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সোনারগাঁয়ের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা ওসমাণ গণির মাধ্যমে লাঞ্চিত ও বঞ্চিত হয়েছেন। সে অপকর্ম করে কোটিপতি হয়েছেন। এক সময় তিনি বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের নৈশ প্রহরী ছিলেন। বর্তমানে গাড়ি, বাড়ির মালিক হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মফিজুল ইসলাম খাঁন বলেন, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ওসমাণ গণি সকল অপকর্মের হোতা। তার বাড়িতে প্রতিদিন মদ ও জুয়ার আসর বসে। মুক্তিযোদ্ধা নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন স্থানে সরকারী জমি ও খাল দখল করেছেন। তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত মুক্তিযোদ্ধা ওসমাণ গণির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন সত্যতা নেই। আমার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করে পরাজিত হয়ে এ অভিযোগ তুলেছেন।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, ওসমান গনির বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত করতে সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দুজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।