নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়ীয়ারচর এলাকার বিএনপির দুই নেতা ও তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। এ বাহিনীর ভয়ে শতাধিক আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এছাড়াও ওই এলাকার বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রনে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপির দুই নেতা। তারা দুজন সম্পর্কে আপন ভাই। একজন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফ। অপরজন পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিল। তাদের বিরুদ্ধে ওই এলাকার বিভিন্ন কোম্পানির মালিকদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। গত ৫আগষ্টের পর আওয়ামীলীগ সমর্থিত নেতাকর্মীদের প্রায় ৩৫টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও ওই গ্রামের আওয়ামীলীগের সমর্থকরা বাড়িতে আসলে তাদের ধরে ডাকাত আখ্যা দিয়ে পুলিশে সোপার্দ করার নজির রয়েছে। তাদের হুমকি থেকে বাদ যায়নি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী ও শিল্প মালিকরা।
জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা হামলার আতংকে আত্মগোপনে চলে যায়। এসুযোগে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীদের শতাধিক বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটানো হয়। তবে সবচেয়ে বেশী ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে পিরোজপুর ইউনিয়নের আষাঢ়ীয়ারচর এলাকায়। পিরোজপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মী আষাঢ়ীয়ারচর গ্রামের আওয়ামীলীগ কর্মী ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম, শাহজালাল, উজ্জল, মারফত আলীর বাড়ি, শাহ আলমের হোটেল, শহর আলীর ঔষধের দোকান, আহসান উল্লাহর দোকান, জসিম উদ্দিনের বাড়ির রড ও আসবাবপত্র লুট করে নিয়ে যায়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় আব্দুস সোবহানের ছেলে রেজেয়ানের মোটর সাইকেল। হামলাকারীরা আবু বকর সিদ্দিকের ৬টি ড্রাম ট্রাকের ব্যাটারি লুট করে নিয়ে যায়। তাছাড়া মেঘনা গ্রুপের সিরামিক ফ্যাক্টুরি, আল মোস্তফা গ্রুপের স্টার ক্যাবল ও আনন্দ শিপইয়ার্ডের জুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রনে নিতে না পেরে তারা তাদের ব্যবহৃর যানবাহনে লোডিং আনলোডিংয়ে ক্ষেত্রে চাঁদা আদায় করে। তাছাড়া আনন্দ শিপইয়ার্ডের ইউনিট-২ এর জমিও দখলে নেওয়ার চেষ্টা তাদের বাহিনী।
শিল্প মালিকদের দাবি, আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আব্দুর রউফ ও আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে একদল বিএনপির নেতাকর্মী। তারা কোম্পানিতে গিয়ে ঝুট তাদের মাধ্যমে বিক্রির জন্য হুমকি দিয়েছে। ঝুট না দিলেই কোম্পানিকে ভূমিদস্যু ট্যাগ লাগিয়ে তাদের লোকজন দিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করিয়ে থাকে। এতে করে প্রশাসনিকভাবে কোম্পানিগুলোকে হয়রানীর শিকার হতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনন্দ শিপইয়ার্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, সরকার পতনের পর থেকে বিএনপি নেতা দুই ভাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের বাহিনী দিয়ে থাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের জমি দখলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট শিল্প মালিকরা।
এলাকাবাসীর দাবী, আষাঢ়ীয়ারচর গ্রামে বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ ও আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে ২৫-৩০টি বাড়ি-ঘর হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। তাদের ভাগিনা ডাকাত দলের সদস্য আব্দুল আজিজ ও সেলিমকে দিয়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকেন। এছাড়াও রাতের আধারে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দেয় তারা। বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতা তাদের দুই ভাইকে শেল্টার দিয়ে থাকে। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। তাদের নেতৃত্বে শ্রমিকলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম ও যুবলীগ কর্মী মেহেদী হাসানকে কুপিয়ে নগদ আড়াই লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এলাকাবাসী জানায়, বিএনপি নেতা আব্দুল রউফ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হলেও তার নির্দেশে ছোট ভাই জলিল ও ভাগিনা আজিজ ও সেলিমের নেতৃত্বে সকল অপকর্ম সংগঠিত করে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের যানবাহন থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, ছিনতাই ও ডাকাতি করে থাকে।
অভিযুক্ত সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রউফ বলেন, কারো বাড়িতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগের কোন সত্যতা নাই। শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাঁদাবাজি ও নিয়ন্ত্রনে নেওয়ার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি দুই কোম্পানির নামে জমি দখল ও পাওনা টাকা আদায়ে মামলা দায়ের করেন।
সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, বিষয়গুলো আমাদের জানা নেই। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।